ইমাম খাইর, সিবিএন:
এই মুহুর্তে লবণ অমদানি করা হবেনা। অধিক লাভের আশায় লবণ মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার বিয়াম অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োজিত ‘মানসম্মত আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন’ শীর্ষক কর্মশালায় শিল্পমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, লবণ আমদানি হবে কিনা তা আপনাদের উপর নির্ভরশীল। বেশীদিন লবণ মজুদ করে রাখার কারণে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। সেই সংকট থেকে লবণ আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। আমরা এমন কাজ করবনা যাতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। লবণ চাষিদের ক্ষতি করে কোন সিদ্ধান্ত নেবেনা সরকার। আপাততঃ লবণ আমদানির কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই।
তিনি বলেন, ঘাটতি লবণের চাহিদা পূরণের জন্য সামুদ্রিক উৎসের পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে লবণ উৎপাদনের ওপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বিসিক। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলো অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামুদ্রিক লবণ উৎপাদনের প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৪ শতাংশ পরিবার আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণ ব্যবহার করছে। শতভাগ আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় আনার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় ইউনিসেফের সহায়তায় লবণ মিল মালিকদের মধ্যে ২৬৭টি আয়োডিনযুক্ত মেশিন (এসআইপি) মেশিন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পটাশিয়াম আয়োডেট বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আবদুল হালিম, বিসিকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মুশতাক হাসান মুহাম্মদ ইফতিখার, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিকের পরিচালক (উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) জীবন কুমার চৌধুরী। ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন বিসিকের মহাব্যবস্থাপক ও সিআইডিডি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল আলম।
বিকাল চারটায় কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজে মিল মালিক ও চাষিদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, ইসলামপুর লবনমিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম (দাদা), ইসলামপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনজুর আলম, আলহাজ্ব অছিয়র রহমান, মাস্টার আবদুল কাদেরসহ লবণ মিল মালিক ও চাষিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ইসলামপুর লবনমিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ শিল্পমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দেশের লবনের চাহিদার সিংহভাগ কক্সবাজার থেকে যোগান হয়। বর্তমানে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিকটন লবন উদ্বৃত্ত আছে বলে বিসিক রিপোর্ট দিয়েছে। যা আগামী মৌসুম পর্যন্ত চলবে। লবণচাষি ও ব্যবসাযী পর্যায়ে অনেক লবন মজুদ আছে। সুতরাং আপাততঃ ভোজ্য লবণের কোন ঘাটতি হবেনা। এরপরও কক্সবাজারবাসীর স্বার্থহানি হয় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবেনা। প্রয়োজনে মাঠ জরিপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৫ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিকটন। এই মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিকটন। এ হিসাবে চাহিদার তুলনায় লবণের ঘাটতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার মেট্রিকটন। সেই বছর ৫ লাখ মেট্রিকটন আমদানি বাদে ২ লাখ ৮৮ মেট্রিকটন উদ্বৃত্ত থাকে।
২০১৮ সালে ১৬ লাখ ২১ হাজার মেট্রিকটন লবণ চাহিদা ছিল। এই বছর ১৪ লাখ ৯৩ হাজার মেট্টিকটন লবণ উৎপাদন হয়। ঘাটতি থাকে ১ লাখ ২৮ হাজার মেট্টিকটন। ২০১৭ সালের উদ্বৃত্ত ২ লাখ ৮৮ মেট্রিকটন বাদে বর্তমানে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিকটন লবণ চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে।
১৩টি কেন্দ্রের (মোকাম) অধীনে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা (আংশিক) সহ ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লবণ চাষ হয়। আগামী নভেম্বর থেকে পুরোদমে লবণ মৌসুম শুরু।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।